রাজনীতির ঐতিহাসিক পাতায় যে নামটি স্পষ্টাক্ষরে লিপিবদ্ধ আছে সে নামটি হলো ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’। এ নামটি থাকবে যুগ যুগ ধরে। ছাত্র রাজনীতিতে প্রাচীন ও ঐতিহ্যগত এক সংগঠনের নাম বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে ছাত্রলীগ শব্দটি বেশ শক্তভাবে অবস্থান করছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সারথি এবং আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ পূর্বের ঐতিহ্য ধরে রাখতে শতভাগ কাজ করে যাচ্ছে। নানা ধরণের বিভ্রান্তির কশাঘাতে যাকে মুছে ফেলা সম্ভব হয়নি। বিকৃতির কালো আঁচড় যতই লেপন করা হয়েছে, খাঁটিরূপে ততই উজ্জ্বলতা ছড়িয়েছে বেশি করে।
প্রতিষ্ঠাকাল থেকে নীতিবিবর্জিত কোনো কর্মকান্ডে মাথানত করেনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বাঙালির ন্যায্য অধিকার আদায় এবং ইতিহাস-ঐতিহ্য সমুন্নত রাখতে জুলুমবাজদের কড়া জবাব দিয়ে প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলকাম হয় উপমহাদেশের বৃহত্তম এ সংগঠনটি। তাই তো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলতেন, ‘ছাত্রলীগের ইতিহাসই বাঙালির ইতিহাস।’
প্রতিষ্ঠার পর ‘৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ‘৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ‘৬৬-এর ছয় দফা ও ১১ দফা আন্দোলন, ‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ‘৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, ‘৯০-এর ‘স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন’ এবং ‘৯৬-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন’ সহ সব প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে এ সংগঠনটির রয়েছে ঐতিহাসিক ভূমিকা।
তৎকালীন ছাত্ররাজনীতির মোক্ষম উদ্দেশ্য ছিল দেশ ও জনগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সব কর্মকান্ডে নিজেদের বিলিয়ে দেয়া। অতীতের ছাত্র রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসা তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, প্রয়াত আবদুর রাজ্জাক, ওবায়দুল কাদেরসহ নাম না জানা আরো অনেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন।
রাজনীতি নামক শব্দটির সঙ্গে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। রাজনীতির সংজ্ঞা বলতে আমরা যা বুঝে থাকি তা হলো-দেশের কল্যাণ তথা মানব ও সমাজসেবামূলক কর্মকান্ডে নিয়োজিত রেখে ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে সর্বদা হীনস্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থানকারীর চরিত্রটিকে মূলত রাজনীতিক বা রাজনীতি বলে গণ্য করা হয়। আর ছাত্র রাজনীতি হলো নেতৃত্ব তৈরীর বাতিঘর বা কারখানা
রাজনীতি কোনো ভোগ্যপণ্য নয়, রাজনীতি শুধু স্বদেশ ও জনকল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেয়া। উপমহাদেশের প্রাচীন রাজনৈতিক ইতিহাস লক্ষ্য করলে ত্যাগী, জনদরদি ও আত্মোৎসর্গকারী বহু রাজনীতিকের নাম ভেসে ওঠে। ঐতিহাসিক মানদন্ডে ওইসব রাজনীতিকের নাম ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে আজও আমাদের অনেক কিছু স্মরণ করিয়ে দেয়। ছাত্র রাজনীতিকে রাজনীতির মূল স্তম্ভ হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়। আজকের ছাত্ররাই আগামী দিনে দেশ পরিচালনার সব ক্ষেত্রে নেতৃত্বভার গ্রহণ করে জাতিকে উপহার দেবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের প্রতিটি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ধারার রাজনীতি শুরু হয়েছে তা শুধু দেশকে নেতৃত্বশূন্যই করছে না, আমাদের নিয়ে যাচ্ছে মানবিক শালীনতা বিবর্জিত অন্ধকার এক সমাজে। একটা সময় ছিল যখন ছাত্রদের রাজনীতির মূল সূতিকাগার হিসেবে গণ্য করা হতো। তখনকার সময়ে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছাত্রদের মূল্যায়ন করা হতো সমাজের দর্পণস্বরূপ। আজকের ছাত্ররাজনীতি যেন সে ধারায় কতটা আছে। তা বিশ্লেষণের দাবি রাখে।
অনেক ইতিহাস ও ঐতিহ্যের মহাসাক্ষী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। যে সংগঠনটি আলোর পথ দেখিয়েছে, পাড়ি দিয়েছে অন্ধকারাচ্ছন্ন বিশাল গন্ডি। ঐতিহাসিক দিক বিবেচনায় ছাত্রলীগের অর্জনগুলো দেখলে আপনা-আপনিই সম্মানভাব চলে আসে। জাতীয় রাজনীতি ছাত্রলীগের পথপ্রদর্শক হলেও মাঝে মধ্যে জাতীয় রাজনীতিকে পথ দেখিয়েছে ছাত্রলীগ। মাকে মায়ের ভাষায় মা ডাকার অধিকারের আন্দোলনটি শুরু করেছিল ছাত্র রাজনীতি তথা ছাত্রলীগের মাধ্যমে। তখন এদেশে ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কোনো ছাত্র সংগঠনের জন্ম হয়নি।
‘৫৪-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে একত্রিত করার গৌরবদীপ্ত দায়িত্বটিও পালন করেছিল ছাত্রলীগ।’ ৬২-এর শিক্ষা আন্দোলনের নামে যে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনটি তৈরি হয়েছিল, তাতেও ছাত্রলীগের কৃতিত্ব অনস্বীকার্য।
‘৬৯-এর অবিস্মরণীয় গণঅভ্যুত্থানে ১১ দফার মধ্যে ছয় দফাকে সন্নিবেশিত করার গৌরবও ছাত্রলীগের। এসব অর্জনে যে সংগঠনটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত সে নামটি সহজে নষ্ট হওয়ার নয়। ছাত্রলীগ সঠিক ছাত্র রাজনীতির চর্চার মাধ্যমে ঐতিহাসিক মানদন্ডের বিচার করবে। জাতির জনকের দেখিয়ে দেয়া পথেই অগ্রসর হবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
সবশেষে বলতে চাই দেশকে এগিয়ে নিতে অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে অতীত ছাত্র রাজনীতি। তাই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে যাক ছাত্র রাজনীতি তথা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। সেই প্রত্যাশাই রইল।
লেখক পরিচিতিঃ
ডাঃ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম
সাবেক সহ-সভাপতিঃ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর।
সাবেক সভাপতিঃ সরকারি ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ।
খোলা কলামে প্রকাশিত সব লেখা একান্তই লেখকের নিজস্ব মতামত। এর সাথে পত্রিকার কোন সম্পর্ক নেই।